মালয়েশিয়ার কারাগার থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশী এক কিশোর প্রবাসীর করুণ কাহিনী

অবৈধভাবে মালয়েশিয়া এসে পুলিশের হাতে আটক হওয়া কিশোর সুজন মিয়া বয়স ১৫ সুজন বলে, সে বছর খানেক আগে কাউকে না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে কাজের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে চট্টগ্রাম চলে যায়। সেখানে কয়েকজন তাকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা জানায়। এতে রাজি হলে সুজনকে তারা চোখ বেঁধে নৌকায় তুলে দেয়। সেখানে তার মতো আরও কয়েক শ লোক ছিল। তারা প্রথমে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে থাইল্যান্ড। পরে স্পিডবোটে করে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়।মালয়েশিয়ায় সুজনসহ আরও ১০ থেকে ১২ জনকে একটি ঘরের ভেতর আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো। প্রতিদিন আমারে মারতো, হাত-পা বাইন্দা রাখত, ঠিকমতো খাইবার দিতো না, শরীরে গরম পানি ঢাইলা দিত, খুব কষ্ট হতো, চিৎকার করে কানতাম কিন্তু কেউ এগিয়ে আসত না। রুদ্ধশ্বাসে কথাগুলো বলল এই কিশোর, ঠিকমতো খাবার না দিয়ে টাকার জন্য বাড়িতে যোগাযোগ করতে বলত।
টাকা দিতে পরিবারের অক্ষমতার কথা জানালে, একদিন তারা সুজনকে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে সুজন মাসিক পাঁচশ রিঙ্গিতের বিনিময়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। তাকে শুধু খাওয়ার খরচ দিয়ে তার আয়ের পুরো অর্থ ওই দালালেরা নিয়ে যেত। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে পালিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দেয় সুজন।সেখানেও তার জীবনে নির্যাতনের নতুন পর্ব শুরু হয়। সুজন জানায়, পুলিশও বেঁধে রেখে নির্যাতন করত, মাঝে মাঝে শরীরে গরম পানি ঢেলে দিত। কারাগারে থাকার সময় এক লোক এসে আমাকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করে। দেশে ফেরত নিতে বাড়ি থেকে টাকা পাঠাতে পারবে কি না জানতে চায়। আমি আমার পরিবারের অক্ষমতার কথা জানিয়ে দিই। তারা আমাকে পরিবারের কাছে একটি চিঠি লিখতে বলে। আমি আমার অবস্থার কথা জানিয়ে চিঠি লিখি।
তারপর টাঙ্গাইল রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ বলেন, রেড ক্রিসেন্টের ‘রিস্টোরিং ফ্যামিলি লিংক’ (আরএফএল) মালয়েশিয়া কার্যালয় থেকে সুজনের একটি চিঠি আসে রেড ক্রিসেন্টের টাঙ্গাইল অফিসে। চিঠির সূত্র ধরে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সুজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার মতো আর্থিক অবস্থা তাদের নেই জানালে কেন্দ্রীয় রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে সুজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
শুক্রবার রাতে সুজন রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় ঢাকায় এসে পৌঁছে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সুজনকে টাঙ্গাইল রেড ক্রিসেন্ট অফিস থেকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।,

No comments:

Post a Comment