পাকিস্তান কেন আমাদের ক্ষতি চায় ?

৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে চরমভাবে পরাজিত হবার পরও পাকিস্তান নামের এই দেশটির আদোই কোন শিক্ষা হয়নি – অন্তত বাংলাদেশ সম্পর্কে। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ এই দেশটিকে পছন্দ করে না। একরকম ঘৃনা করে ব্লা যায়। এবং তার জন্য যথেষ্ট যৌক্তিক কারনও আছে। স্বাধীনতার পর আজ অনেক বছর হয়ে গেল কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানের মনোভাব কি একটুও বদলেছে? চলুন একটু ভেবে দেখি।
পাকিস্তানের তরুন জনগোষ্ঠী কিন্তু ঠিক মত ৭১ এর ইতিহাস পর্যন্ত জানেনা। তারা এটাও জানেনা সেসময় পাকিস্তানীরা বাংলাদেশে কত ধরনের হীন অপরাধ করেছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সেসময় সুসজ্জিত কিছু পশুর দল ছিল এটা সেদেশের তরুন জনগোষ্ঠী জানেই না। কোথাও এই ইতিহাস তাদের পড়ানো হয় না। অবশ্য সঙ্গত কারন আছে মনে হয়। কারন এসব যদি পাকিস্তানী তরুন প্রজন্মকে জানানো হয় তাহলে খোদ নিজেদের দেশের উপরেই তাদের নিজেদের ঘৃনা হবে। বাংলাদেশের প্রতি যে পাকিস্তানের মনোভাব এতটুকু বদলায়নি তা বোঝা যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুটা দিয়ে। এখানে একটা রাজাকার শেষ হয় আর পাকিস্তানে তার মাতম হয়। একটা রাজাকারের ফাঁসি হয় তো দম বন্ধ হয় পাকিস্তানের। যুদ্ধের আগে, যুদ্ধের সময়, এবং যুদ্ধের পরে, রাজাকারদের ফাঁসি হওয়া পর্যন্ত তারাই ছিল বাংলাদেশে পাকিস্তানের এজেন্ট – একথা বিস্তারিত না বললেও চলে। আর এখনও যে নেই তা না। বাংলাদেশে এখনো অনেক পাকিস্তানপন্থী লোকজন আছে – তরুনদের মধ্যেও অনেক আছে। এরা অসম্ভব রকমের পাকিস্তান প্রেমী এবং এরা এটা প্রকাশ করতেও লজ্জাবোধ করে না। ফেসবুকে তো কিছুদিন আগেও ১০,০০০ মেম্বারের একটা গ্রুপ ছিল Bangladeshi Pakistan Lover” নামে। এধরনের কয়েকটা গ্রুপই ছিল। আরও অবাক করা ব্যপার ছিল এসব গ্রুপে তাদের এক্টিভ থাকার ব্যাপারটা। এখন এরকম কটা গ্রুপ অবশিষ্ট আছে কে জানে।
পাকিস্তান এখনও সম্ভবত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোন না কোন চক্রান্তে যুক্ত। সুযোগ পেলেই তারা কিছু না কিছু করার ছুতো খুজে। এই তো গতকালও কক্সবাজারে এক পাকিস্তানী জঙ্গী ধরা খেলো কয়েকজন সহ। তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সন্ত্রাস আইনে মামলা হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞই বলেন বাংলাদেশে টেররিজমকে পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে পাকিস্তান। বাংলাদেশে এখনও যেকোন ইস্যুতে মানুষ যখন দুভাগ হয়ে যায় তখন রাজনৈতিক ভাগের আড়ালে কিছু কিছু মানুষ দুদেশে বিভক্ত হয়ে যায়। তার মধ্যে একটি হলো পাকিস্তানমনা আরেকটি হলো ভারতমনা। আর বাংলাদেশে ২/১ টি রাজনৈতিক দল আছে যারা আবার পাকিস্তানকে একটু ফেভার করে। এই ব্যাপারগুলো ইদানীং মানুষের চোখের সামনেই উঠে আসে।
সবচেয়ে বেশী দুঃখটা লাগে যখন দেখি তরুনদের মধ্যে পাকিস্তানপ্রেমীদের। তারা পারেনা বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তানের একটা অংশ বানিয়ে ফেলতে। একয়াব্র তো এরকম একটা মন্তব্য পড়েছিলাম “বাংলাদেশকে এখনও আমরা পূর্ব-পাকিস্তান মনে করি”। আসলে এরকম একবার না, মনে হয় বেশ কয়েকবারই দেখেছি। তরুন প্রজন্মের পাকিস্তান প্রেমীদের অবশ্য নাম দেয়া হয়েছে “নব্য রাজাকার”।
স্বাধীনতার এত বছর পরেও পাকিস্তান আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নি তাদের কৃত অপরাধের জন্য। এত বড় বড় সব মানবতা বিরোধী অপরাধ তারা করে এসেছে বছরের পর বছর এই দেশের উপর, কিন্তু এ নিয়ে তাদের না আছে কোন লজ্জা না আছে কোন হায়া। একটা জাতি এতটা নির্লজ্জ কিভাবে হতে পারে সেটা ওপরওয়ালাই ভাল বলতে পারবে। গত বছর The Weird Show এর একটি পর্বে আমরা দেখিয়েছিলাম কিভাবে এক পাকিস্তানী বাংলাদেশের পতাকার উপর প্রস্রাব করে সেই পতাকা পুড়িয়ে দিচ্ছিল আর সেই ভিডিও আপলোড করে বাংলাদেশকে অপমান করার চেষ্টা করেছিল। এরা পাকিস্তানের সাধারন মানুষ আর তাদের মনোভাব কতটা জঘন্য হতে পারে! সেই ভিডিওর আমরা জবাবও দিয়েছিলাম। আর পাকিস্তানের রমিজ রাজার কান্ড-কারখানা তো দেখেছেনই।
পাকিস্তানের মনোভাব এখনো বদলায়নি। এবং সুযোগ পেলেই এই পাকিস্তান আবারো ছোবল মারবে বাংলাদেশে – হয়তো ছদ্মবেশে অথবা কারো লেজ ধরে। কারন যাদের নিজেদের অপরাধের জন্য কোন অপরাধবোধ নেই, তাদের না আছে কোন আত্মমর্যাদা, না আছে কোন মানবতা আর না আছে কোন লজ্জা।  রক্ত কি আর বদলায় কখনো?